1. tirtherkak24@gmail.com : tirtherkak :
গুলি ছোড়া বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে: ফিলিস্তিনি মায়ের আর্তনাদ
বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন

গুলি ছোড়া বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে: ফিলিস্তিনি মায়ের আর্তনাদ

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫
গুলি ছোড়া বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে: ফিলিস্তিনি মায়ের আর্তনাদ
গুলি ছোড়া বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে: ফিলিস্তিনি মায়ের আর্তনাদ

নতুন বছর শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে পরিবারের শিশুদের জন্য চকলেট কিনতে বের হয়েছিলেন ২১ বছরের তরুণী শাথা আল-শাব্বাগ। কিন্তু সেই চকলেট নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। বাড়ি ফেরার পথেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শাথার।

শাথা ছিলেন ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনের বাসিন্দা। সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করা এই তরুণী ফিলিস্তিনিদের জীবনের দুঃখগাথা ও সংগ্রামের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। সাহসী, সচেতন এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধ শাথা পরিবারের সবার সঙ্গে জেনিনে বসবাস করতেন।

মেয়ে হত্যার মর্মান্তিক স্মৃতি এখনও তাড়া করে বেড়ায় শাথার মা উম্মে আল-মোতাসিমকে। তিনি বলেন, “সে হাসছিল, বলেছিল, ‘আজ সারা রাত জেগে কাটাব।’ তার পরপরই একটি গুলি এসে মাথায় লাগে।”

শাথা যখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল, তার চোখ খোলা ছিল। মা উম্মে আল-মোতাসিম বলেন, “ওর চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, গুলি ছোড়া বন্ধ করুন! আমার মেয়ে মরে গেছে!”

কিন্তু শাথার মায়ের আর্তনাদ কোনো কাজে আসেনি। মৃত্যুর পরও প্রায় ১০ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। মায়ের ভাষায়, “নিজের শরীর থেকে বের হওয়া রক্তের পুকুরে শাথা পড়ে ছিল।”

শাথার পরিবার পুরোপুরি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এই হত্যার দায় চাপিয়েছে। কারণ, যেখানে শাথা নিহত হয়েছেন, সেই এলাকা পিএর নিয়ন্ত্রণাধীন।

উম্মে আল-মোতাসিম বলেন, “এ দায় পিএ ছাড়া কারও না। তারা সবসময় এলাকায় থাকে, বাইরে থেকে কেউ আসতে বা যেতে পারে না।”

অন্যদিকে, পিএ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য জেনিন ব্যাটালিয়ন নামের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। পিএ সাধারণত এই ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করে।

জেনিন শরণার্থী শিবির এবং আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকে। পিএও এখানে সন্ত্রাস দমনের নামে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।

পিএর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার রজব দাবি করেছেন, “জেনিনে আমরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছি। এই সন্ত্রাসীরা বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে এবং সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।”

অন্যদিকে, জেনিন ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নিজেদের প্রতিরোধ সংগ্রামী হিসেবে দাবি করেছে।

শাথার মৃত্যু ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই জনগণের আস্থা হারাতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তাবিষয়ক সমন্বয় করার কারণে পিএর ওপর ফিলিস্তিনিদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের।

জেনিন শরণার্থী শিবিরে পিএর সামরিক অভিযানে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ১৪ বছরের এক শিশুও রয়েছে। শিবিরের বাসিন্দারা বলছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর চেয়ে পিএর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানই তাঁদের জন্য এখন বড় ভয়।

শাথার পরিবার এবং জেনিনের বাসিন্দারা মনে করেন, শাথার মৃত্যু তাঁদের নিরাপত্তাহীনতার ভয়কে নতুন করে সামনে এনেছে।

শাথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতেন। জেনিনে পিএ ও ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান এবং ধ্বংসের চিত্র শেয়ার করতেন তিনি। এক বছর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের ধ্বংসাবশেষের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন শাথা।

হামাস শাথার মৃত্যুকে ঠান্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছে।

ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব, পশ্চিম তীর এবং গাজার মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুস্তফা বারগুতি বলেন, “ফিলিস্তিনিদের এখন নিজেদের একে অপরকে গুলি করতে দেখছে, যখন ইসরায়েল তাদের সবাইকেই পিষে মারছে।”

শাথা আল-শাব্বাগের মৃত্যু শুধু তাঁর পরিবারের নয়, পুরো ফিলিস্তিনের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তাঁর মর্মান্তিক পরিণতি ফিলিস্তিনের দীর্ঘদিনের সংঘাত, রাজনৈতিক বিভক্তি এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বাস্তবতা তুলে ধরেছে।

আরও পড়ুন:গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত || তীর্থের কাক
Theme Customized By Durjoy Bangla