অগাস্ট থেকে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে গিয়ে ধরা পড়া মানুষের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে, এ সময়কালে অনুপ্রবেশের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়।
ধরা পড়া অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মীয় পরিচয়
বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলের তথ্য অনুসারে, অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ধরা পড়েন। তাদের মধ্যে ৩০১ জন হিন্দু এবং ৪১৫ জন মুসলিম।
পুরো পূর্ব কমান্ডের (ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত) তথ্য অনুযায়ীও একই চিত্র উঠে এসেছে। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ধরা পড়া মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বেশি, তবে হিন্দুদের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।
২০২৩ সালে একই সময়ে ধরা পড়া মানুষের সংখ্যা ছিল ২০৩ জন হিন্দু ও ৪৪৯ জন মুসলিম। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৪ জন হিন্দু ও ২৯৮ জন মুসলিম।
বিএসএফের ব্যাখ্যা
বিএসএফ কর্মকর্তাদের মতে, অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক সুযোগ খুঁজতে ভারতে আসছেন। খুব কমসংখ্যক হিন্দু বলেছেন, তারা বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন। এমন হিন্দুদের সংখ্যা ধরা পড়া অনুপ্রবেশকারীদের মাত্র ১-২ শতাংশ।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ভিসা বিধিনিষেধও অনুপ্রবেশ বাড়ার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশি নাগরিকরা পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কারণে ভারতে আসতে চান, কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে অনেকে অবৈধ পথে সীমান্ত পার করছেন।
হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের আখ্যান নিয়ে বিতর্ক
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের কারণে তারা ভারতে চলে আসছেন—এমন ধারণা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। তবে এবারের পরিসংখ্যান সেই আখ্যানের সঙ্গে মিলছে না। বিএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অগাস্ট থেকে সীমান্তে ধরা পড়া হিন্দুদের সংখ্যা খুবই কম।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
এই তথ্য বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বারবার দাবি করেছে, বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে চলে আসছেন। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বাস্তবে মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি।
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, “বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা দলে দলে ভারতে চলে আসছেন—এই আখ্যান এখন ভ্রান্ত প্রমাণিত হচ্ছে। পাশাপাশি, সীমান্ত দিয়ে আসা কয়েকশো মানুষকে দেখে কোটি মানুষের রাজ্যে জনসংখ্যাগত প্রভাব পড়ার দাবি হাস্যকর।”
অনুপ্রবেশের কারণ
অনুপ্রবেশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বেশিরভাগই অর্থনৈতিক কারণে ভারতে প্রবেশ করেছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, সীমান্তে ধরা পড়ার পর তারা নিজেদের আসল উদ্দেশ্য লুকাতে সুবিধাজনক জবাব দিয়ে থাকেন।
পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ধরা পড়া অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মোট মানুষের প্রকৃত সংখ্যা বোঝায় না। অনেকেই ধরা না পড়ে সীমান্ত পার হতে সক্ষম হন।
সীমান্তে নজরদারি জোরদার
বিএসএফ জানিয়েছে, সীমান্তে নজরদারি আরও কড়া করা হয়েছে। প্রহরীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রতিটি জায়গায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এই বছরের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি এবং বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ‘বিপুল পলায়ন’-এর আখ্যান বাস্তবসম্মত নয়। তবে, সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করার মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করাই বিএসএফের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।