ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত হতে শুরু করেছেন। আয়োজন সফল করতে শহীদ মিনার এলাকা ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সোমবার গভীর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির দফায় দফায় বৈঠক ও আলোচনার পর এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আসে। রাতের ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পূর্ব ঘোষিত ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ মঙ্গলবার দেওয়া হবে না। তার বদলে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
সারাদেশ থেকে ঢাকার পথে শিক্ষার্থীরা
মধ্যরাতে ঘোষণার ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কিছুটা দেরি করে রওনা হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নাটোর, নওগাঁ, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ি নিয়ে শহীদ মিনারে আসছেন।
অনেক শিক্ষার্থী সরাসরি শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে উঠেছেন। এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দেড় থেকে আড়াই লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আয়োজকদের আশা।
অনুষ্ঠান ঘিরে প্রস্তুতি ও কার্যক্রম
সোমবার সন্ধ্যা থেকেই শহীদ মিনার এলাকায় সাউন্ড সিস্টেম, ক্যামেরা, বড় পর্দা এবং ডিজিটাল মনিটরের কাজ সম্পন্ন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন প্রস্তুত করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাতে লেখা রয়েছে, *‘মুজিববাদ নিপাত যাক’, ‘বিপ্লবীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’* ইত্যাদি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের নির্দেশনা
অনুষ্ঠান ঘিরে যানজট এড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।
★গাবতলী হয়ে আসা যানবাহন মানিক মিয়া এভিনিউ ও আগারগাঁও এলাকায় পার্ক করবে।
★সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী দিয়ে আসা যানবাহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পার্কিং করবে।
★আব্দুল্লাহপুর হয়ে আসা যানবাহন ৩০০ ফিট এলাকায় পার্কিং করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য
গভীর রাতের সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব।”
সদস্য সচিব আরিফ সোহেল লিখিত বক্তব্যে জানান, “এটি শুধু আমাদের আন্দোলন নয়; এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্র এখন দায়িত্ব পালন করতে এগিয়ে এসেছে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আলোচনা
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করায় প্রথমে বিতর্ক তৈরি হলেও পরে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষায়
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ আজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্যের এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবেন।
আরও পড়ুন:৩১শে ডিসেম্বর: মুজিববাদী সংবিধানের সমাপ্তি ঘোষণা, শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র