আগামী ৩১শে ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের মাধ্যমে মুজিববাদী সংবিধানের অবসান ঘটানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা জানিয়েছেন, এদিন আওয়ামী লীগও বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে।
রবিবার ঢাকায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের নেতারা এসব কথা বলেন।
ঘোষণাপত্রের পেছনের ভাবনা
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও দালিলিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। তাই আমরা ৩১শে ডিসেম্বর শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা করবো। এটি শুধুমাত্র কোনো দলের বা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করবে না, বরং বাংলাদেশের মানুষের গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে।”
তিনি বলেন, “পাঁচই অগাস্টেই এটি হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু দেরির কারণে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দুই হাজারের বেশি শহীদ এবং বিশ হাজারেরও বেশি আহতদের রক্তে এই আন্দোলনের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা দমন করা যাবে না।”
আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও মুজিববাদী সংবিধানের সমাপ্তি
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, “৭২-এর মুজিববাদী সংবিধান মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও তাদের দলীয় স্বার্থে প্রণীত সংবিধানের অবসান সময়ের দাবি। শহীদ মিনারে আমরা এক দফার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচনা করবো। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একটি অপ্রাসঙ্গিক দলে পরিণত হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়েছে। তবে তা একটি লিখিত ঘোষণার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। ৩১শে ডিসেম্বর ঘোষণাপত্রে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এটি সংশোধন ও পরিমার্জন করা হতে পারে।”
তারা জানান, এই ঘোষণাপত্রের খসড়া ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত ও মন্তব্য যুক্ত করে ৩১শে ডিসেম্বর চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।
আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “যারা পাঁচই অগাস্টে ঢাকায় আসতে পারেননি, তাদের ৩১শে ডিসেম্বর শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকতে হবে। এটি দলীয় ব্যানারহীন একটি কর্মসূচি হবে, যেখানে শহীদ ও আহতদের পরিবার, ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষাবিদসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ অংশ নেবেন।”
এর আগে শনিবার রাতে ফেসবুকে ‘থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, নাও অর নেভার’ এবং ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ শীর্ষক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা এসব পোস্ট দেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক পোস্টে লেখেন, “প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন”। আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, “কমরেডস, নাও অর নেভার।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করা হচ্ছে। তারা আশা করছেন, ৩১শে ডিসেম্বরের এ ঘোষণা বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
৩১শে ডিসেম্বরের কর্মসূচি সম্পর্কে আরও জানতে অপেক্ষা করছে পুরো দেশ।