স্পোর্টস রিপোর্ট: শেষ পর্যন্ত সেই অভিশাপমুক্তি! বহুবার দারুণ শুরু করেও ধসে পড়ার ইতিহাস যাদের, সেই দক্ষিণ আফ্রিকাই লর্ডসের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রচনা করল অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ২৮১ রান তাড়া করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিয়েছে প্রোটিয়ারা। এই জয়ের নায়ক ওপেনার এইডেন মার্করাম। তার ঝকঝকে সেঞ্চুরিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হলো দক্ষিণ আফ্রিকা, আর ঘরে তুলল আইসিসির দ্বিতীয় শিরোপা।

টস জিতে শুরু রাবাদার দাপট

লর্ডস টেস্টে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেটে ঘাস দেখে অনুমান করা গিয়েছিল—পেসারদের জন্য সহায়ক হবে পরিবেশ। ঠিক তাই হলো। কাগিসো রাবাদার দুর্দান্ত বোলিংয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২১২ রানে অলআউট করে প্রোটিয়ারা।

অজিদের হয়ে স্টিভ স্মিথ করেন ৬৬ রান, আর বাও ওয়েবস্টার সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া অ্যালেক্স কেরি ২৩ ও মার্নাস লাবুশানে ১৭ রান করেন। প্রোটিয়া পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়ে রাবাদা ৫১ রানে নেন ৫ উইকেট, মার্কো ইয়ানসেন পান ৩ উইকেট।

কামিন্সের আগুনে ধস প্রোটিয়াদের

জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ধসে পড়ে প্যাট কামিন্সের বিধ্বংসী বোলিংয়ে। মাত্র ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। কামিন্স একাই শিকার করেন ৬টি উইকেট (২৮ রানে)। এছাড়া স্টার্ক পান ২ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বেডিংহাম সর্বোচ্চ ৪৬ ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ৩৬ রান করেন।

এই ইনিংসে অজিরা ৭৪ রানের লিড নিয়ে এগিয়ে যায়, যা দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন আবারও ভাঙবে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন।

দ্বিতীয় ইনিংসে অজিদের ব্যাটিং ব্যর্থতা

দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। তবে দ্বিতীয় দিনের শেষ ভাগ ও তৃতীয় দিনের সকালে তাদের ইনিংসে নামে ধস। মাত্র ২০৭ রানে অলআউট হয়ে যায় পুরো দল। প্রথম ৬ উইকেট হারিয়ে বসে মাত্র ৬৬ রানে। মার্নাস লাবুশানে ২২ রান ছাড়া কেউই দাঁড়াতে পারেননি।

যদিও উইকেট কিছুটা সহজ হওয়ায় নিচের সারিতে কিছুটা প্রতিরোধ আসে। অ্যালেক্স কেরি ৪৩ রান করেন। এরপর সবচেয়ে কার্যকরী ইনিংস আসে স্টার্কের ব্যাট থেকে—১৩৬ বল খেলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ ব্যাটার হ্যাজলউড ১৭ রান করেন। রাবাদা পান আরও ৪টি উইকেট, লুঙ্গি এনগিডি নেন ৩টি।

মার্করামের মহাকাব্যিক ইনিংস ও চ্যাম্পিয়নের জন্ম

২৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুটা ভালো ছিল না, ৯ রানেই ফিরে যান ওপেনার রায়ান রিকেলটন। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচ গড়ার দায়িত্ব নেন এইডেন মার্করাম ও অলরাউন্ডার ওয়ান মুলদার। দ্বিতীয় উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন তারা, মুলদার করেন ২৭ রান।

এরপর মাঠে নামে আসল প্রোটিয়া প্রতিরোধ। মার্করাম ও অধিনায়ক বাভুমা মিলে গড়েন ২১৩ রানের দুর্দান্ত জুটি। মার্করাম তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, আর বাভুমা করেন ৬৬ রান। চতুর্থ দিনের শুরুতে বাভুমা আউট হলেও মার্করামের ব্যাটে জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।

মার্করাম শেষ পর্যন্ত ২০৭ বল খেলে করেন ১৩৬ রানের ইনিংস। যদিও জয়ের কাছাকাছি এসে আউট হয়ে যান, কিন্তু ততক্ষণে জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে ২৮৩ রান তুলে জয় তুলে নেয় এবং প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তোলে।

সংক্ষেপে ম্যাচের সেরা পারফর্মাররা:

এইডেন মার্করাম– ১৩৬ রান (২০৭ বল), ম্যাচসেরা
কাগিসো রাবাদা– ৫/৫১ ও ৪ উইকেট
প্যাট কামিন্স– ৬/২৮
মিচেল স্টার্ক– ৫৮\* (১৩৬ বল), ২ উইকেট

এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জেতা নয়, বরং দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহুবার হতাশা সঙ্গী হয়ে থেকেছে, বড় মঞ্চে বারবার ভেঙে পড়েছে দলটি। কিন্তু এই জয় দেখিয়ে দিল, প্রতিভা ও ধৈর্য থাকলে শাপমোচন একদিন হয়েই যায়। লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি হাতে তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা নতুন ইতিহাস গড়ল।

আরও পড়ুন: টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম দিনে বোলারদের দাপট