স্পোর্টস রিপোর্ট: উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতিহাস গড়লো প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। মিউনিখের আলিয়াঞ্জ এরেনায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরা এর মুকুট পরলো ফরাসি ক্লাবটি।
এটি ছিল একেবারেই একপেশে লড়াই। শুরু থেকেই আধিপত্য দেখিয়ে খেলেছে লুইস এনরিকের দল। গোল উৎসবে নেতৃত্ব দেন তরুণ ফরোয়ার্ড ডিজায়ার দুয়ে, যিনি জোড়া গোল করেন। বাকি তিনটি গোল করেন আশরাফ হাকিমি, খিচা কাভারেস্কাইয়া এবং মাইয়ুলু।
এই জয়ের মাধ্যমে গৌরবের ‘ট্রেবল’ পূর্ণ করলো পিএসজি। আগেই ফরাসি লিগ ওয়ান ও ফ্রেঞ্চ কাপ নিজেদের করে নিয়েছিল তারা, এবার যোগ হলো ইউরোপ সেরার খেতাব। সাবেক বার্সেলোনা কোচ এনরিকের অধীনে এটিই পিএসজির সবচেয়ে বড় অর্জন।
ম্যাচের প্রতিটি গোলের সঙ্গে সঙ্গে আলোয় ঝলমল করে উঠছিল প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, যেন পুরো শহর উদযাপন করছিল সেই মুহূর্তগুলো।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এর আগে কোনো ফাইনালেই ৫ গোল ব্যবধানে জয় দেখা যায়নি। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রেকর্ড গড়েই ট্রফি জয় করলো পিএসজি। এর মাধ্যমে ফ্রান্সের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের কীর্তি গড়লো তারা। প্রথম ফরাসি ক্লাব হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিল অলিম্পিক মার্সেই, ১৯৯৩ সালে মিউনিখেই এসি মিলানকে হারিয়ে (১-০ গোলে)।
বিশেষ বিষয় হলো, এবার পিএসজি এই সাফল্য অর্জন করেছে কোনো তারকা ত্রয়ী—লিওনেল মেসি, নেইমার বা কিলিয়ান এমবাপের—ছাড়াই। এক সময় দলে এই তিনজনকে ভেড়াতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছিল ক্লাবটি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের আশায়। কিন্তু তারা যা পারেনি, সেটা করে দেখালো নতুন প্রজন্মের তরুণ ও ক্ষুধার্ত এক দল।
এমবাপে যখন ক্লাব ছাড়লেন, অনেকেই ভেবেছিল পিএসজির যুগ শেষ। কিন্তু ভুল প্রমাণিত হলেন ওসমান ডেম্বেলেরা। তার দারুণ নেতৃত্বে এবং লুইস এনরিকের ট্যাকটিক্সে রূপকথার মতো সাফল্যের গল্প লিখে ফেললো পিএসজি।
ম্যাচের শুরুতে ইন্টার মিলানের সমর্থকরা ক্লাব সঙ্গীত গেয়ে উচ্চ আত্মবিশ্বাস দেখালেও, মাঠে নেমে একেবারেই নড়বড়ে ছিল তাদের রক্ষণভাগ। পিএসজির ছোট ছোট পাস, টেকনিক্যাল মুভমেন্ট ও পজিশনাল খেলা ইন্টারের রক্ষণকে তছনছ করে দেয়।
বল দখলের দিক থেকে পিএসজি ছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি সময় আধিপত্যে। ইন্টার মিলান কেবলমাত্র দুটি শট রাখতে পেরেছিল পিএসজির পোস্টের দিকে, যেখানে পিএসজি আটবার শট নিয়ে পাঁচবারই বল পাঠায় জালে।
১২তম মিনিটে প্রথম গোলটি করেন আশরাফ হাকিমি, ভিতিনহার দারুণ এক ক্রস থেকে। ২০ মিনিটে গোল করেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ তারকা ডিজায়ার দুয়ে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে পিএসজি বিরতিতে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটি করেন দুয়ে। এরপর ৭৩ মিনিটে খিচা কাভারেস্কাইয়া ও ৮৬ মিনিটে মাইয়ুলু গোল করে ইন্টার মিলানের জন্য ম্যাচটি সম্পূর্ণ এক দুঃস্বপ্নে পরিণত করেন।
এই জয়ের মাধ্যমে পিএসজি শুধু ট্রফি জেতেনি, বরং ইউরোপে নিজেদের আধিপত্যের বার্তা দিয়েছে। আগামীর ফুটবলে তারা যে বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, সেটা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।
আরও পড়ুন: বার্নাব্যুর ভয় জয় করে রিয়ালকে বিদায়, চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে আর্সেনাল