চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে বিরোধের পাশাপাশি দুই দেশের স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
উত্তেজনার সূত্রপাত
সম্প্রতি ভারতের মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর থানার সুকদেবপুর এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নতুন কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়। কাজ শুরু হওয়ার পরই বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি)। নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের আগে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু বিএসএফ এ বিষয়ে বিজিবিকে কোনো পূর্ব নোটিশ দেয়নি। বিজিবি আপত্তি জানালে কাজ সাময়িক বন্ধ হয়।
বিজিবি ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রায় ১২০০ গজ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। নির্মাণকাজ শুরুর পর তারা আপত্তি জানালে কাজ বন্ধ করা হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই বিএসএফ পুনরায় কাজ শুরু করে।
উত্তেজনার বিস্তার
এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের উভয় পাশে স্থানীয় জনগণ জড়ো হতে শুরু করে। বাংলাদেশের অংশে লোকজনের ভিড় বেশি হলেও ভারতের অংশেও স্থানীয়রা লাঠি, রামদা, ও কাস্তে হাতে জড়ো হয়। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতীয় অংশ থেকে ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেওয়া হলে বাংলাদেশের অংশ থেকে তার জবাবে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
বাংলাদেশি সাংবাদিক মো. কাওসার আহমেদের পাঠানো ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের অংশে হাস্যরসাত্মক পরিবেশ তৈরি হলেও উত্তেজনার আভাস স্পষ্ট ছিল।
পতাকা বৈঠক ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজিবি জানায়, ১৯৭৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কাজ অনুমোদিত।
বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে আব্দুর রউফ জানান, বিএসএফ অনুমোদনের কথা বললেও প্রটোকল মানা হয়নি। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ তাদের পুরোনো অনুমোদনের কথা উল্লেখ করলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা অমীমাংসিত বলে জানানো হয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক
বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। তবে সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমাদের জমি সীমান্তের কাছে হওয়ায় আমরা বেশি ঝুঁকিতে আছি।”
উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, এবং পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক রয়েছে।
আরও পড়ুন:ঢাকা আলিয়া মাদরাসার মাঠ থেকে আদালত সরাতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ