ট্রাম্পের হুমকিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বক্তব্য দেন।
ট্রাম্প বলেন, “এটি হামাসের জন্য ভালো কিছু হবে না। বাস্তবতা হলো, সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমার আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”
তবে তাঁর এই হুমকি অস্পষ্ট হওয়ায় বিশ্লেষকরা এটিকে গাজায় সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ব্যাপক অস্ত্র সহায়তা দিলেও গাজায় সরাসরি মার্কিন হস্তক্ষেপে রাজি হননি।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হামাস নেতা ওসামা হামদান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উচিত আরও মার্জিত ও কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করা।” আলজেরিয়ায় অবস্থানরত এই নেতা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হওয়ার জন্য দায়ী করেন।
এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা চলছে। বাইডেন প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চলা এই আলোচনার বিষয়ে ট্রাম্পকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে।
আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের সক্রিয়তা
মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ দূত হিসেবে স্টিভ উইটকফকে মনোনীত করেছেন ট্রাম্প। তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে আশাবাদী। উইটকফ বলেন, “এই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই আলোচনায় গতি এনেছে। আমরা আশা করি, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে কিছু জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।”
রয়টার্স জানায়, গাজায় যুদ্ধপরবর্তী অস্থায়ী সরকারের গঠন নিয়ে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই অস্থায়ী সরকার গাজার দায়িত্ব পালন করবে।
ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা
যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলার মধ্যেই গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত বুধবার ভোরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ২১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে এক হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন প্রাণ হারান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ৫১ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৮ জন। চলমান হামলায় গত ১৫ মাসে ইসরায়েলি হামলায় ৪৫,৯৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,০৯,২৭৪ জন আহত হয়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করতে পারে। তবে গাজায় মানবিক সংকট এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন:জাকারবার্গের ঘোষণা: ফ্যাক্টচেকার কম, গুরুত্ব পাবে রাজনৈতিক কনটেন্ট