স্পোর্টস রিপোর্ট: **চেলসি ৩-০ পিএসজি**
মঞ্চে আমেরিকান র্যাপার দোজা ক্যাট আর কলম্বিয়ান গায়ক জে বালভিনের পারফরম্যান্স, গ্যালারিতে ৮১ হাজার দর্শক, আর মাঠে নীল ঝড়—এভাবেই রঙিন হয়ে উঠেছিল ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধ। কিন্তু এই উৎসবের মধ্যেও কারও মুখে বিস্ময়, আবার কারও চোখে আনন্দাশ্রু। কেননা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে পেছনে ফেলে দেয় ইংলিশ ক্লাব চেলসি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে চেলসির পারফরম্যান্স যেন ছকভাঙা এক কাব্য। পিএসজি সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩ গোল করে দাপট দেখিয়েছিল, কিন্তু ফাইনালে যেন সেই একই রকম দাপটই ফিরিয়ে দিয়েছে চেলসি—তাদেরই বিপক্ষে! দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল না হলেও ম্যাচে উত্তেজনা কমেনি একটুও।
৮৫ মিনিটে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক মুহূর্ত—পিএসজির মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস চেলসির লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেল্লার চুল টেনে ফেলে দেন। ভিএআরের সহায়তায় সরাসরি লাল কার্ড দেখতে হয় তাঁকে। তখনই শেষ হয়ে যায় পিএসজির ঘুরে দাঁড়ানোর সব আশা।
চেলসির জয়ের নায়ক ছিলেন তরুণ ইংলিশ তারকা কোল পালমার। প্রথমার্ধেই করেন জোড়া গোল, আরেকটি গোল করান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড হোয়াও পেদ্রোকে। ম্যাচের শুরু থেকেই পিএসজিকে চেপে ধরেছিল চেলসি। মাত্র ৮ মিনিটে পালমারের বাঁ পায়ের বাঁকানো শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়, যা ছিল সতর্কবার্তা।
এরপর ২২ ও ৩০ মিনিটে পরপর দুই গোল করেন পালমার। প্রথমটিতে মালো গুস্তোর কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের মাথা থেকে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন। দ্বিতীয়বার সেন্টার ব্যাক লেভি কোলউইলের পাস পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে বাঁ পায়ের আরেকটি নিখুঁত শটে পরাস্ত করেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোন্নারুম্মাকে।
তবে চেলসির তৃতীয় গোলটি ছিল সবচেয়ে চমকপ্রদ। পালমারের ডিফেন্স চেরা পাস ধরে এগিয়ে আসা দোন্নারুম্মাকে ওভারল্যাপে বল তুলে দেন পেদ্রো, যা সরাসরি জালে।
পিএসজি যে সুযোগ পায়নি, তা নয়। তাদের হয়ে বেশ কয়েকবার গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেন ওসমান দেম্বেলে, খিচা কাভারাস্কাইয়া, নেভেস ও দেজিরে দুয়ে। কিন্তু চেলসি গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজ ছিলেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। পুরো ম্যাচে করেন ৬টি সেভ।
ম্যাচের শেষভাগে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মাঠজুড়ে। নেভেসের লাল কার্ডের ঘটনায় রেফারির সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় পিএসজির কোচ লুইস এনরিকেকে। শেষ বাঁশি বাজার পর তো তিনি চেলসির খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায়ও জড়িয়ে পড়েন। গোলরক্ষক দোন্নারুম্মাকেও দেখা যায় সেই বিতর্কে অংশ নিতে। এমনকি চেলসির গোলদাতা পেদ্রোর কাঁধে হাত রেখে তাকে কিছু বলতেও দেখা গেছে এনরিকেকে।
এই হারে ‘পারফেক্ট সিজন’ থেকে এক ধাপ দূরে থেকে যেতে হলো পিএসজিকে। লিগ, কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা ছিল তাদের দৃষ্টি। কিন্তু প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায়। ২০১১ সালে কাতারি মালিকানার অধীনে যাওয়ার পর এই নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার কোনো ম্যাচের প্রথমার্ধে ৩ গোল খেয়ে বসে পিএসজি। আগের দুইবার তারা ফিরে এসেছিল, এবার পারেনি।
চেলসির জন্য এই জয় আরও বিশেষ কিছু। কারণ মে মাসে কনফারেন্স লিগের ফাইনালেও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কোল পালমার। পুরো মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ১৮ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট করে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন। ম্যাচ শেষে DAZN-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পালমার বলেন,
**‘এটা অসাধারণ অনুভূতি। ম্যাচের আগে সবাই আমাদের নিয়ে সন্দেহ করছিল। আমরা জানতাম, নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। আর সেটা করতে পেরেছি।’**
তিনি কোচ এনরিকে মারেসকার ভূয়সী প্রশংসাও করেন—
**‘কোচ জানতেন কোথায় জায়গা পাওয়া যাবে। আমাকে ফ্রি ভূমিকায় খেলতে দিয়েছেন। আমি কেবল সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’**
এই শিরোপায় মৌসুম শেষ করল চেলসি, আর পিএসজি মাঠ ছাড়ল হতাশা আর বিতর্ক নিয়ে। ফুটবলের অনিশ্চয়তার গল্পে আরেকটি অধ্যায় যোগ হলো নিউ জার্সির সেই রাতেই।
আরও পড়ুন: হেডিংলিতে ভারতের বিপক্ষে শেষ দিনে ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয়