যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই বিস্ময়কর মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজা দখল ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক আলোচিত মন্তব্য করে চলেছেন ট্রাম্প। বিশেষত, ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) লাগাতার হামলায় গাজায় প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়েছে, যা সরাতে অন্তত ২১ বছর সময় লাগবে এবং এতে ব্যয় হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তথ্য সামনে আসার পর গাজা পুনর্গঠনে আগ্রহ দেখান ট্রাম্প। স্থানীয় সময় শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক ও ঘোষণার ব্যাখ্যা
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “ফিলিস্তিনিরা গাজায় ফিরে যেতে চায় শুধু এই কারণে যে, তাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু গাজা এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ভবনই ধ্বংস হয়ে গেছে।”
ট্রাম্পের মতে, ফিলিস্তিনিরা অন্য কোথাও “শান্তি ও সম্প্রীতির” সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবে। তিনি বলেন, “আমেরিকা গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং আমরা সেখানে কিছু কাজ করব। আমরা গাজার মালিক হব এবং সেখানে থাকা বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র ধ্বংস করব।”
তিনি আরও বলেন, “যদি প্রয়োজন হয়, আমরা গাজা দখল করব। সেই সঙ্গে আমরা এটিকে পুনর্গঠন করব, হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করব, এবং এটিকে এমন একটি স্থানে পরিণত করব, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য গর্বের বিষয় হবে।”
বিতর্কিত অর্থনৈতিক নীতি ও কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার পরামর্শ
ট্রাম্প শুধু গাজা নিয়ে নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়েও একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫% এবং চীনের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করেন। তবে চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার পর এই শুল্ক কার্যকর করলেও ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন তিনি।
এছাড়াও, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য করার পরামর্শ দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই রিপাবলিকান নেতা।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরিণতি কী হতে পারে?
ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে পারে বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র। তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কতটা এগোবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন:মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার আশঙ্কা: সতর্ক বার্তা ট্রাম্পের