সাড়ে সাত বছর পর মা-ছেলের মহাপুনর্মিলন: ইতিহাসের সাক্ষী আজকের দিন
আজ বুধবার, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য দিন। দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে লন্ডনে, সূর্যের ঝলমলে আলোয় শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার মজলুম মা খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানের মধ্যে এক আবেগঘন পুনর্মিলন ঘটতে চলেছে। এই সাক্ষাৎ শুধু তাদের পারিবারিক সম্পর্কের পুনর্জাগরণ নয়, বরং একটি জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় অধ্যায়।
গত সাড়ে সাত বছর ধরে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু এই দীর্ঘ অপেক্ষার পর আজ সরাসরি সাক্ষাৎ হবে তাদের। এ মুহূর্ত শুধু মা-ছেলের জন্য নয়, বরং লাখো বিএনপি কর্মী এবং সমর্থকের জন্য এক আবেগঘন সময়। তাদের সঙ্গে পুনর্মিলনের সাক্ষী হবেন তারেক রহমানের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান, আদরের নাতনী ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান।
২০১৭ সালের ১৫ জুলাই, সর্বশেষ লন্ডনে পা রেখেছিলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেদিন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়। সে সময় তাদের মধ্যে এক আবেগঘন সাক্ষাৎ হয়েছিল। এরপর দেশে ফিরে আসার পর তাকে শেখ হাসিনার সরকার মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারারুদ্ধ করে। সেই সময় থেকে শুরু হয় এক দীর্ঘ অমানবিক নির্যাতনের অধ্যায়।
বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের সময় তার শারীরিক অবস্থা গুরুতরভাবে অবনতির দিকে যায়। হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন তিনি। বিএনপি এবং পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন জানানো হলেও শেখ হাসিনার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে।
গতকাল, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। তার সফরের উদ্দেশ্য উন্নত চিকিৎসা এবং মায়ের সঙ্গে তারেক রহমানের পুনর্মিলন। লন্ডনে পৌঁছে তিনি সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন এবং এরপর বড় ছেলের বাসায় যাবেন।
বাংলাদেশের আপোসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়া আজ দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসে তিনি আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে চান। তার লন্ডন যাত্রা উপলক্ষে লাখো নেতাকর্মী গতকাল তাকে বিদায় জানায়।
আজকের দিনটি শুধু একটি পরিবারের পুনর্মিলন নয়, বরং একটি জাতির গণতান্ত্রিক স্বপ্নের পুনর্জাগরণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই পুনর্মিলন নতুন এক আশার আলো জ্বালাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের হৃদয়ে।
আরও পড়ুন:মেজর ডালিম লাইভ সাক্ষাৎকারে যা বললেন