1. tirtherkak24@gmail.com : tirtherkak :
পবিত্র সাহাবী গাছের গল্প: ইতিহাস, তর্ক ও বাস্তবতা
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ০৭:৫৩ অপরাহ্ন

পবিত্র সাহাবী গাছের গল্প: ইতিহাস, তর্ক ও বাস্তবতা

  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫
পবিত্র সাহাবী গাছের গল্প: ইতিহাস, তর্ক ও বাস্তবতা
পবিত্র সাহাবী গাছের গল্প: ইতিহাস, তর্ক ও বাস্তবতা

Pistacia atlantica এক প্রকার গাছ, যা আরবীতে ‘আল-বাতাম’ নামে পরিচিত। এটি আরব দেশগুলোতে ‘শাজারাতুল হায়াত’ বা জীবন বৃক্ষ নামেও ডাকা হয়। এর দীর্ঘায়ু এবং মরুভূমিতে টিকে থাকার ক্ষমতার জন্যই এমন নাম। মরুভূমি অঞ্চলে এই গাছের প্রচুর উপস্থিতি দেখা যায়। তবে এর মধ্যে একটি বিশেষ গাছ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, যা ‘সাহাবী গাছ’ নামে পরিচিত।

পবিত্র সাহাবী গাছের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য

জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে আল-বাক্বীয়াওয়িয়্যাহ নামক এক কণ্টকাকীর্ণ স্থানে এই গাছটি অবস্থিত। এটি আল-আযরাক্ব ও আল-সাফাওয়ী শহরের মাঝামাঝি এবং আল-মাফরিক শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। এই গাছের ছায়া প্রায় ৫০ মিটার পর্যন্ত প্রসারিত হয়। গাছটির মূল অংশের ব্যাস ৯০ মিটার, উচ্চতা ১১ মিটার, এবং এটি ২৮৩ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

গল্পের শুরু: নবী করিম (সা) ও সাহাবী গাছ

বিশ্বাস করা হয়, নবী করিম (সা) মাত্র ১২ বছর বয়সে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সিরিয়া যাওয়ার পথে এই গাছটির নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সে সময়, গাছটি সম্মান প্রদর্শন করে ডালপালা নুয়ে তাঁর ওপর ছায়া দিয়েছিল। ঘটনাটি দেখেই খ্রিস্টান পাদ্রী বাহীরা নবী করিম (সা)-কে চিনতে পেরেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি হচ্ছেন সেই প্রতিশ্রুত শেষ নবী।

ইতিহাসের তর্ক ও গবেষণার বিতর্ক
২০০২ সালে ড. আব্দুল কাদির হাসান নামের একজন প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করেন যে এই গাছটি ১৪৫০ বছরের পুরনো। তিনি এটিকে নবী করিম (সা)-এর বিশ্রামের স্থান বলে চিহ্নিত করেন। তবে, এই দাবির সঙ্গে অনেক গবেষক দ্বিমত পোষণ করেছেন।

বিশেষত, জর্ডানের রয়্যাল জিওগ্রাফিক সেন্টারের গবেষণা উপদেষ্টা প্রফেসর ইবরাহীম মূসা আযযাকারতী এবং লেখক হানি আল-আযীযী এ বিষয়ে দ্বিমত করেন। তাঁদের মতে, ইতিহাস এবং ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে এই দাবির পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

বিরোধপূর্ণ যুক্তিগুলো

ঐতিহাসিক তথ্যের অভাব:ইবনে হিশাম, তাবারী বা অন্যান্য বিশিষ্ট ঐতিহাসিকদের লেখায় গাছটির অবস্থানের কোনো উল্লেখ নেই। বুসরা শহর, যেখানে নবী করিম (সা) পাদ্রী বাহীরার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, সেটির উল্লেখ বারবার এসেছে।

ভৌগলিক বাস্তবতা:বুসরা শহর থেকে সিরিয়ার পথে সরল এবং সহজ রাস্তা ছিল, যা তৎকালীন বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত হতো। কণ্টকাকীর্ণ আল-বাক্বীয়াওয়িয়্যাহর পথ বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করার সম্ভাবনা কম।

গাছের প্রকৃত বয়স: জর্ডানের কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে গাছটির বয়স মাত্র ৫২০ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ড. আব্দুল কাদিরের ১৪৫০ বছরের দাবি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে নয়।

সাহাবী গাছ ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামে সাহাবী বলতে তাঁকেই বোঝানো হয়, যিনি ঈমানের সঙ্গে নবী করিম (সা)-কে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন। যদি এই গাছকে সাহাবী বলা হয়, তাহলে মক্কার অনেক পাথর বা চাঁদকেও সাহাবী বলতে হয়, কারণ সেগুলোও নবী করিম (সা)-এর সঙ্গে বিশেষ ঘটনা সম্পৃক্ত।

বস্তুপূজার বিপদ ও শিক্ষণীয় দিক

ইসলামের মূল বার্তা হলো একত্ববাদ এবং বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থেকে মুক্ত থাকা। সাহাবী গাছের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি ও বরকত লাভের চেষ্টা একপ্রকার বস্তুপূজার লক্ষণ। সাইয়িদুনা উমর (রা) একবার বাইয়াতুর রিদওয়ানের স্মৃতি বহনকারী একটি গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কারণ তিনি দেখতে পান, মানুষ সেটিকে কেন্দ্র করে বরকত লাভের আশায় জড়ো হচ্ছে।

একইভাবে, হাজরে আসওয়াদ পাথরকে চুমু দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন:“হে পাথর! আমি জানি, তুমি উপকার বা ক্ষতি করতে সক্ষম নও। যদি নবী করিম (সা) তোমাকে চুমু দিতে না দেখাতেন, আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না।”

সাহাবী গাছ নিয়ে অনেক গল্প এবং বিশ্বাস প্রচলিত থাকলেও ইতিহাস এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে এটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। আমাদের উচিত ধর্মীয় বিষয়গুলোতে ইতিহাস এবং শরিয়াহ নির্দেশিত যুক্তিগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া। নবী করিম (সা)-এর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা তাঁর আদর্শ অনুসরণে নিহিত, কোনো বস্তুকে কেন্দ্র করে নয়।

আরও পড়ুন: শুক্রবার: সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিনের ফজিলত ও বিশেষ তিন আমল

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত || তীর্থের কাক
Theme Customized By Durjoy Bangla