1. tirtherkak24@gmail.com : tirtherkak :
জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে সংশয় কেন?
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ১১:৫২ অপরাহ্ন

জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে সংশয় কেন?

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে সংশয় কেন?
জুলাই ঘোষণাপত্র' নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে সংশয় কেন?

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের‘ উদ্যোগে প্রস্তাবিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নানা ধরনের সন্দেহ ও আলোচনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত “বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দেয়ার হুমকি” এবং এর পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপট: গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঘোষণা দেন যে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে” অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে এবং বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘কবর’ দেয়া হবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, “বাহাত্তরের সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত। এটি বাতিল করার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজন হলে সংশোধন করা যেতে পারে।”

ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপির সন্দেহ: বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগের পেছনে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা হতে পারে। তাদের ধারণা, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদদে বা সমর্থনে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তারা বিশ্বাস করেন না যে এর সঙ্গে কোনো বিদেশি শক্তি যুক্ত রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে উঠে আসে:
১. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেছনে কারা রয়েছে।
২. এই উদ্যোগ নির্বাচনের দাবি উপেক্ষা করে শাসন দীর্ঘায়িত করার চেষ্টার অংশ কি না।
৩. সমাবেশ আয়োজনের বিপুল অর্থের উৎস কী।

দলের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি ‘বিকল্প রাজনৈতিক কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হতে পারে।

সরকারের অবস্থান: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্রের উদ্যোগে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’।

তবে ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি বিকল্প প্রস্তাব আনার কথা জানানো হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ঘোষণাপত্র প্রকাশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, “বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দল গঠনের কথা বলছে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে সংগঠন গঠনের সুযোগ পেলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি মনে করছে, বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্ম, নাগরিক কমিটি, সরকার ও জামায়াতের মধ্যে একটি অলিখিত ঐক্য গড়ে উঠেছে, যা নির্বাচনের সময়সীমাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।”

বিএনপির প্রতিক্রিয়া: সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে নজর রাখবেন। একইসঙ্গে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরেছেন।

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ আপাতত স্থগিত থাকলেও, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে যে সন্দেহ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনো বিরাজমান। দলটি মনে করছে, ঘোষণাপত্রের এই উদ্যোগের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক পরিসর তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা বিএনপির অবস্থান ও লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আরও পড়ুন:প্রতিদিন জিয়াউর রহমানের নাম নিলে বেহেশত নিশ্চিত: কুমিল্লায় বিএনপি নেতা কামরুল হুদা

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত || তীর্থের কাক
Theme Customized By Durjoy Bangla