চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে থেমে থাকা একটি জাহাজ থেকে পাঁচজনের মরদেহ এবং তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পরে আহতদের মধ্যে দুইজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ জনে। জাহাজে সাত খুন এর এই ঘটনা সারাদেশে জনমনে উদ্যেগের সৃষ্টি করে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে এ ঘটনা সামনে আসে। চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, এমভি আল-বাখেরা নামের একটি জাহাজে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। জাহাজটি চট্টগ্রামের কাপ্তাই থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাচ্ছিল।
জাহাজটির গতিবিধি ও মালিকের বক্তব্য
নৌ পুলিশ সুপারের তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করার কথা ছিল। তবে সেটি হরিণা এলাকায় থেমে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়।
জাহাজটির মালিক দিপলু রানা বলেন, রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জাহাজের চালকের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন চালক জানান, জাহাজটি মেঘনা নদীতে বহরের মধ্যেই ছিল। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, “বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে না পেয়ে কাছাকাছি থাকা আমাদের আরেকটি জাহাজ মুগনি-৩ এর নাবিকদের জানাই। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে পারে।”
মুগনি-৩ জাহাজের চালকের বিবরণ
মুগনি-৩ জাহাজের চালক মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, “আমরা খালি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম। বেলা ১টার দিকে মালিকের নির্দেশে এমভি আল-বাখেরা জাহাজের কাছে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, পাঁচজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং তারা জীবিত ছিলেন না। এছাড়া আরও তিনজন গুরুতর আহত ছিলেন। তাদের দ্রুত উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে প্রাথমিক তথ্য
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহত ও আহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। কয়েকজনের গলা কাটা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রবিবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে।
নৌ পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি ডাকাতি কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে হতে পারে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
জাহাজ ও পণ্য পরিবহনের তথ্য
বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের বরাদ্দে এমভি আল-বাখেরা জাহাজটি ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে সার বোঝাই করে রওনা হয়। বিসিআইসির সার পরিবহনের দায়িত্ব ছিল মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজের।
এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পারভেজ হোসাইন জানান, জাহাজটি রওনা হওয়ার পর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তবে সোমবার সকাল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুগনি-৩ জাহাজের মাধ্যমে তারা এই ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেন।
তদন্ত ও সম্ভাব্য কারণ
পুলিশ জানায়, জাহাজে ডাকাতি হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে শত্রুতাজনিত কারণও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জাহাজের মালিক দিপলু রানা বলেন, “আমি জানি না কীভাবে বা কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ বের করবে।”
চাঞ্চল্যকর সাত খুন এর এই ঘটনায় চাঁদপুর নৌ পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন:র্যাবের অভিযানে কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার