নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পথে জাতীয় নাগরিক কমিটি: লক্ষ্য, প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ

বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় নাগরিক কমিটির বিজয় র‍্যালি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছে। বিকেলে বাংলামোটর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বড় পরিসরের এই র‍্যালিতে ঢাকার বিভিন্ন থানা ও জেলা থেকে সদস্যরা যোগ দেন।

এ র‍্যালির মাধ্যমে নাগরিক কমিটি সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করলেও, এর আসল উদ্দেশ্য হলো নতুন রাজনৈতিক দলের ভিত্তি গড়ে তোলা। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকেই নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা চলছে।

ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্য

প্রাথমিকভাবে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে দল গঠনের পরিকল্পনা থাকলেও, নানা জটিলতার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। এখন নাগরিক কমিটি আশা করছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ১০০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তৃণমূলে সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে কাজ চলছে।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হলে, আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ব। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।”

নতুন দলের আদর্শ ও নেতৃত্ব

নাগরিক কমিটি নতুন দলের জন্য যৌথ নেতৃত্বের ধারণা নিয়ে কাজ করছে। একক নেতার আধিপত্য এড়াতে তারা একাধিক যোগ্য নেতৃত্বের ভিত্তিতে দল পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে।

আদর্শিক দিক থেকে তারা “মধ্যমপন্থি রাজনীতি” অনুসরণ করবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা বাম-ডান বিভাজন এড়িয়ে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য উগ্র জাতীয়তাবাদ বা ধর্মীয় চরমপন্থা থেকে দূরে থেকে একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা।”

নতুন দল ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

গত চার দশকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বড় কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেনি। ফলে নতুন দলের গ্রহণযোগ্যতা এবং সংগঠন বিস্তারের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের বিস্তার এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারলে দলটি সফল হতে পারে।

তবে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই নতুন দল কি সরকারি আনুকূল্যে তৈরি হচ্ছে, নাকি এটি সত্যিই একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগ?

নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ক্ষমতার লক্ষ্য

নাগরিক কমিটি বলছে, নতুন দল অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে তাদের মূল লক্ষ্য এবারই ক্ষমতায় যাওয়া নয়। আখতার হোসেন বলেন, “আমরা এখনই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি না। তবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।”

তরুণ নেতৃত্ব ও গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা তাদের শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে বিশ্বাস করেন নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠের বাস্তবতাই নির্ধারণ করবে নতুন এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুন:কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে ডাকাতদের জিম্মি দশা থেকে কর্মকর্তাদের উদ্ধার; আটক ৩