1. tirtherkak24@gmail.com : tirtherkak :
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন

দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম

  • প্রকাশিত: রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৪
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মানব জীবনে ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা

ইসলাম হলো কুরআন, হাদিস দ্বারা পরিচালিত একেশ্বরবাদী ধর্ম ও জীবনপদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে ইসলামকে আমরা শুধু ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। আমরা মনে করি যে, ইসলাম হলো শুধু স্রষ্টাভিত্তিক কাজকর্ম। নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ করা, যাকাত দেওয়া। ইসলামকে আমরা শুধু এসব গন্ডির মধ্যেই রাখতে ভালোবাসি। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ এক জীবনব্যবস্থা সেটা মানতে চাই না। আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রতিটা ক্ষেত্রেই আল্লাহর কোরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.) এর হাদিস অনুসারে সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাকে ইসলাম বলে। শুধু নামাজ রোজায় ইসলাম সীমাবদ্ধ না। ইসলামের পরিধি ব্যাপক, বিস্তৃতি। ইসলামের প্রসারণ আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু, দোলনা থেকে কবর, পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত। আমাদের ইহকালীন-পরকালীন মুক্তি, শান্তির জন্য ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা এবং পথপ্রদর্শক।

ইসলাম একটা সুশৃঙ্খল, পরিপাটি, সাজানো-গোছানো জীবনপদ্ধতি। ইসলামকে শুধু ধর্ম বলে একে আমি ক্ষুদ্র গ-ির মধ্যে আবদ্ধ করতে চাই না। ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন এক জীবনব্যবস্থা যা ব্যক্তির জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। ইসলামের সৌন্দর্যের কথা বললে বলে শেষ করা যাবে না। ইসলামের যে মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভ আছে, যার উপর ভিত্তি করে ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে। যেমন ঈমান, নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্জ। এ পাঁচটি স্তম্ভের দিকে তাকালেই আমরা ইসলামের সৌন্দর্যতা খুঁজে পাবো। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য এ পাঁচটি স্তম্ভ ফরজ বা অত্যাবশ্যক করেছেন। এ ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম আমাদের পথপ্রদর্শক স্বরূপ।

প্রথমে আমরা নামাজের কথায় আসি। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। পাড়া-মহল্লার সবাই এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে একে অন্যকে দেখার, খোঁজ খবর নেওয়ার সুযোগ হয়। একত্রে সারিবদ্ধভাবে যখন জামায়াতে দাঁড়ায় তখন সমাজের উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য, কোন ভেদাভেদ থাকে না। তখনই সবাই এক আল্লাহর স্মরণে, এক আল্লাহর কাছে মাথা নত করে। আল্লাহ তাআলা নামাজের পাশাপাশি যাকাতকেও ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুরা বাকারার ২৭৭ আয়াতে বলেন, যাঁরা আল্লাহর উপর ঈমান এনে সৎ কাজ করবে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত আদায় করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং চিন্তিতও হবে না।” কোরআন আল্লাহ সুবহানাওয়া তাআলা ৮২ বার নামাজের সাথে সাথে যাকাতের কথা বলেছেন। সুতরাং নামাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি যাকাজ আদাইও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যাকাত হলো ধনীর সম্পদ থেকে গরিবের জন্য প্রাপ্ত অধিকার। আল্লাহ পৃথিবীতে সবাইকে সমান সম্পদ দিয়ে পাঠাননি। কাউকে ধনী, কাউকে গরিব করেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তবে এতে ধনী গরিব উভয়ের জন্যই দৃষ্টান্ত রয়েছে। ধনীর সম্পদ থেকে গরিবরা সম্পদ পাবে। এ যাকাত প্রদানের ফলে ধনী গরিবের মধ্যে বৈষম্য, পার্থক্য দূর হয়। আল্লাহ তাআলা কী সুন্দর করেই না বৈষম্য নিরসনের উপায় বলে দিয়েছেন!

ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হলো রোজা। রমজান মাসে সুবাদে সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সবধরনের পানাহার, আহার থেকে বিরত থাকা হলো রোজা। আল্লাহ তার বান্দাদের উদ্দেশ্য করে কোরআনে সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা করা হয়েছিল তোমাদের তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” এ মাস হলো আল্লাহর বিধিনিষেধ, হুকুম আহকাম মান্য করার মাস। আল্লাহ তাআলা এখানে দেখিয়েছেন যে, যারা অনাহার অর্ধাহারে কতটা কষ্টে দিন কাটায় তা ধনীরা বুঝবে না। তাই তিনি রোজার মাধ্যমে গরিবের দুঃখ, কষ্টটা তুলে ধরেছেন। পুরো একমাস ধনীরা অনাহারে রোজা রেখে ক্ষুধার্তের অবস্থা বুঝতে পারে। আল্লাহ কত সুন্দর করেই না রোজার ফজিলত তুলে ধরেছেন তাঁর বান্দার কাছে।

এবার আসি ইসলামের সর্বশেষ স্তম্ভ হজ্জের কথায়। আল্লাহ প্রত্যেক সুস্থ, সবল, বিবেকবান, সামর্থবান প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হজ্জ ফরজ করেছেন, যাঁরা হজ্জের পূর্ণ অর্থ বহন করতে এবং সেখান থেকে ফিরে আসতে সক্ষম। হজ্জ হলে মুসলমানদের জন্য মিলনমেলা, যাকে বলা হয় মহাসম্মেলন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসলমান পবিত্র মক্কা মদিনায় জিলহজ্জ মাসে কিছু দিনের জন্য একত্রিত হয়। তাদের ভাষা, আচার-আচরণ, চলাচল, পোষাক, আকার-আকৃতি সর্বব্যাপি প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কালচার হওয়া সত্ত্বেও সবাই এক মনে, একই সাদা পোষাকে মহান আল্লাহর ডাকে একত্রিত হয়। সবার মুখে এক আল্লাহর নাম। আল্লাহ তাআলা হজ্জকে ফরজ করে গোটা মুসলিম জাতিকে একত্র করার সুযোগ করে দিলেন। তাদের একে অন্যের ভাষা,আচরণ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক রীতিনীতি বুঝতে, একে অন্যের সংস্কৃতি জানতে কী অপরূপ এক মিলনমেলা! এই হজ্জের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমদের মাঝে এক বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের তৈরি হয়।

ইসলাম শুধু পাঁচটি স্তম্ভেই সীমাবদ্ধ নয়। দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম এর পরিসর আরও ব্যাপক, বিস্তৃতি। আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা সবক্ষেত্রেই ইসলাম আবশ্যক ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা, গরিব-এতিমের সাথে আচরণ, সমাজের একে অন্যের খোঁজ খবর নেওয়া সব ক্ষেত্রেই ইসলামের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ব্যক্তির আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ, কথার মাধুর্যতা সবখানেই ইসলামের গুরুত্ব, প্রভাব করেছে।

ইসলাম মানুষকে মুক্তির আহবান করে, আত্মার পরিশুদ্ধি করে। ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির বিশ্বাস, ভালোবাসা তৈরি করে। প্রতিবেশীর হক আদায়, তাদের খোঁজ খবর নেওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা, রোগ শোকে পাশে থাকা ইত্যাদি কাজের নির্দেশনা দেয় ইসলাম। পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করলে মানুষের ইহকালে ও পরকালে মুক্তি মিলবে।

ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত রাষ্ট্রনায়ক ধনী গরিব, আত্মীয় অনাত্মীয়, উঁচু নিচুর মধ্যে কখনো পার্থক্য করবে না। তার মনে স্বজনপ্রীতির কোন স্থান থাকবে না। ব্যক্তির স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাজের দায়িত্ব পাবে, সে দলীয় বা বিরুদ্ধ দলীয় লোক হলেও। ইসলামই নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করেছে। নারীর অধিকার রক্ষায় পুরুষ সবসময়ই সোচ্চার থাকবে।

আরও পড়ুন:ঘরের মাঠে টেস্টে ওয়াইটওয়াশ টিম ইন্ডিয়া

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত || তীর্থের কাক
Theme Customized By Durjoy Bangla